যেসব বাবা-ছেলে জুটি বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন

বিশ্বকাপ যে কোন ফুটবলারের জন্যই একটা গর্বের ব্যাপার। কিন্তু সেটা যদি হয় তার পরিবারের কাছে গৌরবময়, তাহলে তো আর কথাই নেই। কোন পরিবারের বাবা-ছেলে দু‘জনই যদি বিশ্বকাপ খেলতে পারেন, তাহলে ব্যাপারটা কত মর্যাদার? বেশ কিছু বাবা-ছেলে জুটি আছেন, যারা উভয়ই বিশ্বকাপে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

সিজার মালদিনি-পাওলো মালদিনি
সিজার আর পাওলো মালদিনি, উভয়েই নিজ নিজ সময়ে ইতালির শ্রেষ্ঠ ডিফেন্ডার ছিলেন। পাওলোকে তো তর্কযোগ্যভাবে ফুটবল ইতিহাসেরই শ্রেষ্ঠতম ডিফেন্ডার বলা হয়। দুজনই ক্লাব ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন কিংবদন্তির মতো, দুজনই এসি মিলানের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়নস লিগ) জিতেছেন পাঁচবার! ছেলে পাওলো মালদিনি তো আবার এক কাঠি সরেস, চ্যাম্পিয়নস লিগ একাই জিতেছেন পাঁচবার, পাঁচবারই এসি মিলানের হয়ে! ওদিকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাপ-ব্যাটা দুজনই অধিনায়ক ছিলেন ইতালির, ১৯৬২ বিশ্বকাপে ইতালির অধিনায়ক ছিলেন সিজার আর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে পাওলো!

ড্যানি ব্লিন্ড ও ডেলে ব্লিন্ড
এই বিশ্বকাপে ক্যাসপারের মতোই গত বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের লেফটব্যাক ডেলে ব্লিন্ড ইতিহাস গড়েছিলেন খেলতে নেমেই। ডেলের বাবা ড্যানি ব্লিন্ড নিজেও ছিলেন একজন ডিফেন্ডার, খেলেছেন আয়াক্সের মতো ক্লাবের হয়ে। ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালের দুটো বিশ্বকাপ খেলা ড্যানি ব্লিন্ড পরবর্তী জীবনে কোচও ছিলেন, এমনকি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ থাকার কারণে কিছুদিন তাঁর ছেলে ডেলে খেলেছেন তাঁর অধীনে।

মিগুয়েল আলোনসো ও জাবি আলোনসো
সত্তর ও আশিক দশকে স্পেনের খুবই কার্যকরী মিডফিল্ডার ছিলেন মিগুয়েল, খেলেছিলেন রিয়াল সোসিয়েদাদ, বার্সেলোনার মতো ক্লাবের হয়েও। রিয়াল সোসিয়েদাদের হয়ে দুবার লিগ জেতা এই মিডফিল্ডার ১৯৮২ সালে স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, আর তাঁর ছেলে জাবি আলোনসো তো টানা তিন বিশ্বকাপ খেলে ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসও করেছেন স্পেনের সঙ্গে!

পাবলো ফোরলান ও ডিয়েগো ফোরলান
১৯৭০ ও ১৯৭৪ সালে দুই বিশ্বকাপ খেলা উরুগুইয়ান ডিফেন্ডার পাবলো ফোরলানের ছেলে ডিয়েগো ফোরলানের ক্যারিয়ারটা বাবার থেকে অনেক বেশি বর্ণাঢ্য। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ভিয়ারিয়াল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাবেক এই স্ট্রাইকার উরুগুয়ের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনটি, যার মধ্যে ২০১০ বিশ্বকাপে তাঁর পাঁচ গোলেই উরুগুয়ে হয়েছিল চতুর্থ, ফলে ডিয়েগো নিজে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়।

ম্যানুয়েল স্যানচিস মার্টিনেজ ও ম্যানুয়েল স্যানচিস হোন্তিয়েলো
বাপ-ব্যাটা দুজনই ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্ডার। দুজনই রিয়ালের হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। ছেলে আবার জিতেছেন দুটো! ১৯৬৬ বিশ্বকাপে স্পেন দলে বাবা মার্টিনেজ খেলেছিলেন, ওদিকে ছেলে হোন্তিয়েলো খেলেছেন ১৯৯০ বিশ্বকাপ।

লোদজিমিয়ের্জ স্মলারেক ও এবি স্মলারেক
বাবা লোদজিমিয়ের্জকে পোল্যান্ড ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার মানা হয়। ১৯৮২ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপ খেলা লোদজিমিয়ের্জের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই ১৯৮২ বিশ্বকাপে তৃতীয় হয় পোলিশরা। এদিকে ছেলে এবি স্মলারেকও স্ট্রাইকার, খেলেছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, বোল্টন ওয়ান্ডারার্সের হয়ে। ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলে পোল্যান্ডের হয়ে কোনো গোল করতে পারেননি সেবার এবি স্মলারেক।

চা-বুম কুন ও চা-দু রি
শুধু দক্ষিণ কোরিয়া নয়, অনেকের মতেই এশিয়ার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম খেলোয়াড় চা-বুম কুন। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে খেলেছিলেন এই চা-বুম কুন। তাঁর ছেলে চা-দু রি ২০০২ বিশ্বকাপে বিশ্বকে চমকিয়ে দেওয়া সেই দক্ষিণ কোরিয়া দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, পরে খেলেছেন ২০১০ বিশ্বকাপেও।

জ্যাঁ জুরকায়েফ ও ইউরি জুরকায়েফ
ফ্রান্সের হয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলা জ্যাঁ জুরকায়েফ ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ওদিকে ছেলে ইউরি জুরকায়েফ খেলোয়াড় হিসেবে বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপ খেলে ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ সালের শিরোপাটাও জিতেছিলেন তিনি!

মিগুয়েল রেইনা ও পেপে রেইনা
তালিকায় বাকি সবার সঙ্গে মিগুয়েল রেইনা ও তাঁর ছেলে পেপে রেইনার পার্থক্য হলো, বাপ-ব্যাটা দুজনই স্পেনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অব্যবহৃত গোলরক্ষক হিসেবে ছিলেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে স্পেন স্কোয়াডে মিগুয়েল ছিলেন বিকল্প গোলরক্ষক, আর ছেলে পেপে রেইনার ভাগ্যেও একই ভূমিকা জুটেছে ২০০৬ সাল থেকে টানা চার বিশ্বকাপে, কখনো ইকার ক্যাসিয়াস বা কখনো ডেভিড ডা হেয়ার বিকল্প গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে গেছেন পেপে!